ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ডিম পাহাড়ের’ সৌন্দর্য হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের

এনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান ::

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ৩৩ কি.মি. দীর্ঘ থানচি–আলীকদম সড়কের মাঝপথে থাকা ‘ডিমপাহাড়’ এলাকাটি হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের। এছাড়া দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপর নির্মিত এই সড়কপথটিও (থানচি–আলীকদম) পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় দীর্ঘদিন ধরে। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এই আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজনেতারা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এই সড়কপথের পাশে বসবাসকারী ম্রো, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম এবং থানচি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছে এ সড়কের মাঝপথে অবস্থিত ‘ডিমপাহাড়’ এলাকাটি।

তাছাড়াও পুরো ৩৩ কি.মি. সড়কপথ জুড়েই রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রয়েছে রকমারি ফুল–ফলে আচ্ছাদিত সবুজ গাছ–গাছালিও। পিচঢালা আঁকা–বাঁকা এই পথে ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করে পাহাড়ি দৃশ্যগুলো। পুরো সড়কপথের সাথে যোগ হয়েছে সবুজপাহাড় আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছোট–ছোট পাড়া/গ্রামগুলোর বৈচিত্র্যময় মানুষদের জীবনধারা ও পথচলা। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এখনও বিপদমুক্ত নয় এমন এলাকাসমূহে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা চৌকি কিংবা নিরাপত্তা ক্যাম্প বসানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পর্যটকরা।

কুমিল্লা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক আবদুল সালাম, ফরিদ আহমদ এবং কলিমুল্লাহ জানান, তারা গত সপ্তাহে আলীকদম হয়ে থানচি উপজেলা সদরের সড়কপথ ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানে তারা ‘ডিমপাহাড়ে’ কিছু সময় কাটিয়ে বেশ আনন্দ উপভোগ করেছেন। তারা বলছেন, কেবল ডিমপাহাড় এলাকাটিই নয়, ৩৩ কি.মি. দীর্ঘ থানচি–আলীকদম উপজেলা সড়কের প্রতি ১০ কি.মি. পর পর পথিক বা পর্যটকদের জন্যে একটি করে অস্থায়ী বিশ্রামাগারসহ নিরাপত্তা চৌকি নির্মাণ করা আবশ্যক।

এসব নির্মিত হলে ভ্রমণ পিপাসুরা এ সড়ক ব্যবহারে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে পৃথকস্থানে স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকিসমূহে যাতায়াতকারী পর্যটকসহ যাত্রীবহনকারী যানবাহনগুলোর চালক এবং যাত্রীদের জরুরি মোবাইল নম্বরসহ ডাটা লিপিবদ্ধ করা হয়। যাতে করে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো কিংবা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে।

যেভাবে যাবেন ডিম পাহাড়ে :

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া বাসস্টেশন থেকে আলীকদমমুখী বাস কিংবা ছোট যানবাহনে আলীকদম উপজেলা সদরে এবং সেখান থেকে হালকা যানবাহনে সহজেই যাওয়া যায় ‘ডিমপাহাড় এলাকা’ তথা পুরো আলীকদম–থানচি সড়কে। আবার বান্দরবান জেলা সদর হয়ে থানচি উপজেলা সদর থেকে যে কোনো হালকা যানবাহন চেপেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করা যায় ওই সড়কপথে। তবে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা হিসেবে পাহাড়ে যানবাহন চালনা বিষয়ে দক্ষ এমন চালককেই সাথে নিতে হবে।

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে আলীকদম–থানচি সড়কপথে যাওয়ার সময় লামা উপজেলার টপহিল মিরিন্‌জা পর্যটন কেন্দ্র এবং আলীকদম উপজেলা সদরের কাছে পর্যটন কেন্দ্র আলী চূড়ংগ দর্শনের সুযোগ রয়েছে। বান্দরবান জেলা সদর হয়ে থানচি–আলীকদম সড়কপথ ভ্রমণে গেলে দর্শনীয় স্থান প্রান্তিকলেক, নীলাচল, রাজবাড়ি, শৈলপ্রভাত, চিম্বুক পাহাড়, জিয়া পুকুর, সুভ্রনীলা, নিলগিরি এবং জীবননগর অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যটকদের ভ্রমণ মৌসুম না হওয়া সত্তেও প্রতিদিনই বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি বন্ধের দিনে বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটছে বান্দরবানে। পর্যটনের ভরা মৌসুমে তো তিল ধারণের জায়গাও থাকে না এখানে।

পাঠকের মতামত: